Saturday, May 9, 2015

মা,

এখন মাঝরাত,
আমি জানি তুমি আমাদের মত ঘুমাও নি। 
একটা সময় ছিলো, তুমি রাতে বিশ্রাম নিতে; 
এখন আর সেই ফুরসত কই? 
তোমার বুকে যে ২৪ ঘন্টাই ঘোরে অর্খনীতির চাকা! 
তাই এই অসময়েই তোমাকে স্মরণ করছি।
মা,
৯ মাসের অবিচল ধৈর্য্য ও উত্তাল বেদনার পরই তো তুমি ‘মা’। 
শৈশবে যে শিশু উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতো, 
যৌবনে প্রাচুর্যের মোহে সে লাগামহীন টাট্টু ঘোড়া; 
বেয়াড়াপনা তার রন্ধ্রে-রন্ধ্রে। 
দু’দশক আগেও, এটাকে বোধ হয় দুষ্টুমি বলা যেতো, 
কিন্তু এখন, কিন্তু এখন নষ্টামি বলা ছাড়া কোনো গতি দেখছি না।


তোমার প্রসব বেদনার ক’বছর আগে 
যে ধ্বনি বা বর্ণমালার জন্য জীবন হারিয়ে শহীদ পেলাম; 
সেই সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের রক্তে ভেজা শার্ট যাদুঘরে না থেকে, 
ঐ শার্টের একটি সুতাও যদি আমার হৃদয়ে থাকতো, 
তাহলে, 
তাহলে বুলিতে যে মিথ্যা, আর ঝুলিতে যে পাপ, তার শাপ কিছুটা হলেও মোচন হতো।

রাজপথে সব প্রজারাই ছিলো, ভাষার দাবীতে প্রানের আকুতি
শক্ত পিচে ফুল ফুটেছিলো, স্বরে_অ,  স্বরে_আ , হ্রস্ব_ই
এখন ভাষার বাসা শুধু বুকে, মুখ খুঁজে ফিরে ধুঁকে-ধুঁকে,
মুখে ফোটে ফিরিঙ্গি খই, ক- খ- গ পলাতক রই॥

সুখ বা শোক দিবস দুটোই এখন বানিজ্যিক হায়েনার খাদ্য, 
আর ১৬ই ডিসেম্বর বা একুশে ফেব্রুয়ারি; 
সবই ফুরফুরে “হলিডে”। 
কনসার্ট, কনফারেন্স, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, এমনকি, 
এমনকি সংসদ অধিবেশন; 
সব এখন “স্পনসর্ড”! 
সার্বজনীন পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে লাখ টাকার আতশবাজি ফুটে; 
আর সেই একই অনুষ্ঠানে গলায় প্ল্যাকার্ড লাগিয়ে ভিক্ষা করে একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা।
যে মানচিত্রের সীমানা লাখো শহীদের রক্তের কালিতে আঁকা, 
সে সীমানায় আজো রক্ত ঝড়ে। 
যে সার্বভৌমত্বের বড়াই করে বলি “আমরা বাংলাদেশী”; 
সেই সার্বভৌমত্ব কেনা-বেচা হয় আন্তর্জাতিক মীমাংসার টেবিলে। 
“কূট”এর সংগে “নীতি”যায়না বলেই বোধ হয়, 
কূটনীতি না বলে সবাই “ডিপ্লোমেসি” বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। 
আর প্রতিনিয়ত নিজের সাথে প্রতারনা করা জনগন বোঝেনা যে 
পাঁচ বছর পর-পর তারা একই ভুল করে। 
থোড়-বড়ি-খাড়া আর খাড়া-বড়ি-থোড়; 
বার বার খাল কেটে কুমির আনা কবে, কবে শেষ হবে তোর?

প্রচারনাতেই প্রসার, “আর্ট”এ শুধু টাকার কালচার,
স্বাধীনতা হলো পন্য, বিলবোর্ড-প্ল্যাকার্ডে রঙের বাহার।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দেশটা এখন পাশার বোর্ডে
ষোলো কোটি জনতা, পিঠ বাঁচিয়ে নিজেরাই বাঁচে॥

মা,
জানি তুমি মমতাময়ী, 
একটাও আগ্নেয়গিরি নেই তোমার বুকে, 
আছে কেবল জালের মত বিছিয়ে রাখা নদী। 
তোমার শোকের বহি:প্রকাশ হিসেবে সেখানে প্রায়ই চর পড়ে। 
তোমার ক্ষোভ দেখি টর্নেডোতে, ভুমিকম্পে, জলোচ্ছাসে… 
তোমার কি একবারও মনে হয় না মা, 
এ অস্তিত্বের কোন মানে নেই, এই ঘর ঠিকানাবিহীন? 
তোমার কি মনে হয় না, 
আঁতুড় ঘরে লবন দিয়ে শেষ করে দেয়া উচিৎ ছিলো তোমার পথভ্রষ্ট সন্তানকে, 
মনে হয় না “সাফারি পার্ক” থেকে জঙ্গল ভালো?
আমার তো মনে হয়, ছোট খাঁচা থেকে মুক্ত হয়ে আরো বড় খাঁচায় এলাম! 
জেলখানাতেই আছি এখনো… 
এখান থেকেই চিঠিটা পোস্ট করবো। 
পেলে,পেলে উত্তর দিও…

এখানে আমৃত্যু অন্ধকার, অপেক্ষায় শুধু পারাপার
রোদের ফালি, চাদেঁর কালি, নীলাকাশের হাহাকার।
হাড়ের তুলিতে রক্তের রঙে, যে প্রলাপ এ চিঠিতে
সেই কান শুনে নেবে, জ্বলে যে আমার দহনে॥
পৌছেঁ যাবে ঠিকই জেনো, তোমার আমার পোস্টবক্সে
পৌছেঁ যাবে ঠিকই জেনো, দেশ-মাতার ঠিকানাতে
পৌছেঁ যাবে ঠিকই জেনো, তোমার আমার পোস্টবক্সে
পৌছেঁ যাবে ঠিকই জেনো, দেশ-মাতার ঠিকানাতে...


Title: Desh Matar Kache Chithi
Band: Shohortoli
Album: Opor Prishtha Droshtobbo

Tuesday, April 14, 2015

জন্মান্তরেও তুমি
                
                        শুভাশীষ তালুকদার (শিমুল )

কত না জনম পার করেছি
তোমায় পাব বলে,
শত জনমের সাধনার পরে
তুমি আমার হলে !

জন্ম থেকে জন্মান্তরে
তোমায় খুঁজে যাওয়া,
শত জনম পার হয়ে
তোমায় খুঁজে পাওয়া !

বিধাতার কাছে চেয়েছি তোমায়
কত,না নয়ন জলে,
নিও না গো তারে তুমি
যারে তুমি দিলে !

জনম আমার পূর্ণ হল
তোমায় কাছে পেয়ে,
স্বর্গ সুখের সুধার মাঝে
মন যে ওঠে গেয়ে !

প্রাণের সাথে প্রাণ মিলিয়ে
প্রেমের গান গাওয়া
হৃদয় মাঝে সুখ এনে দেয়,
তোমার একটু ছোঁয়া !

সারাটা জীবন থেক তুমি
আমায় ভালবেসে,
জনম আমার ধন্য কর
থেকে আমার পাশে !

Wednesday, April 8, 2015

উপমা

আমার কাছে শব্দের সঞ্চয় এত কম ছিল যে,
সমস্ত শব্দ মিলিয়েও আমি বুঝাতে পারিনি আমাকে।
পৃথিবীতে এমন একটি ফুলের জন্ম আজও হল না
যে ফুলটি তুমায় দিলে তুমি বুঝতে
আমার ভালোবাসা কতটা রঙ্গিন।
আকাশের বিশালতার উপময়ায় তুমি খুঁজবে না
আমার ভালবাসার বিশালতা।
সাগরের পরে আর এমন উপমা নেই
যার গভীরতা উপমা দিয়ে তুমায় বুঝাব
আমার ভালোবাসা কতটা গভীর।
তার পরেও তুমার কাছে
ফুল রঙ্গিন, আকাশ বিশাল, সাগর গভীর।
আর আমি?
আর আমি শুধুই তোমার জীবনের 
হঠাৎ করা ভুল-।



(সংগৃহীত)

Monday, April 6, 2015

অপরাজিতা


পরাজিতা তুই সকল ফুলের কাছে,
তবু কেন তোর অপরাজিতা নাম?
বর্ণ-সেও ত নয় নয়নাভিরাম।
ক্ষুদ্র অতসী, তারো কাঞ্চন-ভাতি ;
রূপগুণহীন বিড়ম্বনার খ্যাতি!
কালো আঁখিপুটে শিশির-অশ্রু ঝরে—
ফুল কহে—মোর কিছু নাই কিছু নাই,
ফুলসজ্জায় লজ্জায় যাই নাক,
বিবাহ-বাসরে থাকি আমি ম্রিয়মাণ।
মোর ঠাঁই শুধু দেবের চরণতলে,
পূজা-শুধু-পূজা জীবনের মোর ব্রত ;
তিনিও কি মোরে ফিরাবেন আঁখিজলে—






তোমার চোখ এতো লাল কেন
                                          -নির্মলেন্দু গুণ


আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরজা খুলে দেবার জন্য।
বাইরে থেকে দরজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত।
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক। 
আমি হাত পাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না।
আমি জানি এই ইলেকট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী-সেবার দায় থেকে।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুকঃ
আমার জল লাগবে কিনা, আমার নুন লাগবে কিনা,
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরোও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কিনা।
এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল 
আমি নিজেই ধুতে পারি।
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভেতর থেকে 
আমার ঘরের দরোজা খুলে দিক। 
কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক।
কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুকঃ “তোমার চোখ এতো লাল কেন?"

Sunday, April 5, 2015

অন্য প্রেমিককে


মাছরাঙা চ’লে গেছে — আজ নয় কবেকার কথা; 
তারপর বারবার ফিরে এসে দৃশ্যে উজ্জল। 
দিতে চেয়ে মানুষের অবহেলা উপেক্ষায় হ’য়ে গেছে ক্ষয়; 
বেদনা পেয়েছে তবু মানুষের নিজেরও হৃদয় 
প্রকৃতির অনির্বচনীয় সব চিহ্ন থেকে দু’ চোখ ফিরিয়ে; 
বুদ্ধি আর লালসার সাধনাকে সব চেয়ে বড় ভেবে নিয়ে। 

মাছরাঙা চ’লে গেছে — আজ নয় কবেকার কথা; 
তারপর বারবার ফিরে এসে ডানাপালকের উজ্জলতা 
ক্ষয় ক’রে তারপর হয়ে গেছে ক্ষয়। 
মাছরাঙা মানুষের মতো সূর্য নয়? 
কাজ করে কথা ব’লে চিন্তা করে চলেছে মানব; 
যদিও সে শ্রেষ্ঠ চিন্তা সারাদিন চিন্তানাশা সাগরের জলে 
ডুবে গিয়ে নিঃশব্দতা ছাড়া আর অন্য কিছু বলে?

কাজলা দিদি


বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?
পুকুর ধারে লেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই-
মাগো আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?
সেদিন হতে কেন মা আর দিদিরে না ডাকো;-
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আসি যখন, দিদি বলে ডাকি তখন,
ওঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো?
আমি ডাকি তুমি কেন চুপটি করে থাকো?
বল মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল-বিয়ে হবে!
দিদির মত ফাঁকি দিয়ে, আমিও যদি লুকাই গিয়ে
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে,
আমিও নাই-দিদিও নাই- কেমন মজা হবে।
ভুঁই চাপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল,
মাড়াস্ নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল।
ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে,
উড়িয়ে তুমি দিও না মা, ছিঁড়তে গিয়ে ফল,-
দিদি এসে শুনবে যখন, বলবি কি মা বল!
বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই-
এমন সময় মাগো আমার কাজলা দিদি কই?
লেবুর ধারে পুকুর পাড়ে ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে’
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, তাইতে জেগে রই
রাত্রি হলো মাগো আমার কাজলা দিদি কই?