Tuesday, April 14, 2015

জন্মান্তরেও তুমি
                
                        শুভাশীষ তালুকদার (শিমুল )

কত না জনম পার করেছি
তোমায় পাব বলে,
শত জনমের সাধনার পরে
তুমি আমার হলে !

জন্ম থেকে জন্মান্তরে
তোমায় খুঁজে যাওয়া,
শত জনম পার হয়ে
তোমায় খুঁজে পাওয়া !

বিধাতার কাছে চেয়েছি তোমায়
কত,না নয়ন জলে,
নিও না গো তারে তুমি
যারে তুমি দিলে !

জনম আমার পূর্ণ হল
তোমায় কাছে পেয়ে,
স্বর্গ সুখের সুধার মাঝে
মন যে ওঠে গেয়ে !

প্রাণের সাথে প্রাণ মিলিয়ে
প্রেমের গান গাওয়া
হৃদয় মাঝে সুখ এনে দেয়,
তোমার একটু ছোঁয়া !

সারাটা জীবন থেক তুমি
আমায় ভালবেসে,
জনম আমার ধন্য কর
থেকে আমার পাশে !

Wednesday, April 8, 2015

উপমা

আমার কাছে শব্দের সঞ্চয় এত কম ছিল যে,
সমস্ত শব্দ মিলিয়েও আমি বুঝাতে পারিনি আমাকে।
পৃথিবীতে এমন একটি ফুলের জন্ম আজও হল না
যে ফুলটি তুমায় দিলে তুমি বুঝতে
আমার ভালোবাসা কতটা রঙ্গিন।
আকাশের বিশালতার উপময়ায় তুমি খুঁজবে না
আমার ভালবাসার বিশালতা।
সাগরের পরে আর এমন উপমা নেই
যার গভীরতা উপমা দিয়ে তুমায় বুঝাব
আমার ভালোবাসা কতটা গভীর।
তার পরেও তুমার কাছে
ফুল রঙ্গিন, আকাশ বিশাল, সাগর গভীর।
আর আমি?
আর আমি শুধুই তোমার জীবনের 
হঠাৎ করা ভুল-।



(সংগৃহীত)

Monday, April 6, 2015

অপরাজিতা


পরাজিতা তুই সকল ফুলের কাছে,
তবু কেন তোর অপরাজিতা নাম?
বর্ণ-সেও ত নয় নয়নাভিরাম।
ক্ষুদ্র অতসী, তারো কাঞ্চন-ভাতি ;
রূপগুণহীন বিড়ম্বনার খ্যাতি!
কালো আঁখিপুটে শিশির-অশ্রু ঝরে—
ফুল কহে—মোর কিছু নাই কিছু নাই,
ফুলসজ্জায় লজ্জায় যাই নাক,
বিবাহ-বাসরে থাকি আমি ম্রিয়মাণ।
মোর ঠাঁই শুধু দেবের চরণতলে,
পূজা-শুধু-পূজা জীবনের মোর ব্রত ;
তিনিও কি মোরে ফিরাবেন আঁখিজলে—






তোমার চোখ এতো লাল কেন
                                          -নির্মলেন্দু গুণ


আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরজা খুলে দেবার জন্য।
বাইরে থেকে দরজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত।
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক। 
আমি হাত পাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না।
আমি জানি এই ইলেকট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী-সেবার দায় থেকে।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুকঃ
আমার জল লাগবে কিনা, আমার নুন লাগবে কিনা,
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরোও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কিনা।
এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল 
আমি নিজেই ধুতে পারি।
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভেতর থেকে 
আমার ঘরের দরোজা খুলে দিক। 
কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক।
কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুকঃ “তোমার চোখ এতো লাল কেন?"

Sunday, April 5, 2015

অন্য প্রেমিককে


মাছরাঙা চ’লে গেছে — আজ নয় কবেকার কথা; 
তারপর বারবার ফিরে এসে দৃশ্যে উজ্জল। 
দিতে চেয়ে মানুষের অবহেলা উপেক্ষায় হ’য়ে গেছে ক্ষয়; 
বেদনা পেয়েছে তবু মানুষের নিজেরও হৃদয় 
প্রকৃতির অনির্বচনীয় সব চিহ্ন থেকে দু’ চোখ ফিরিয়ে; 
বুদ্ধি আর লালসার সাধনাকে সব চেয়ে বড় ভেবে নিয়ে। 

মাছরাঙা চ’লে গেছে — আজ নয় কবেকার কথা; 
তারপর বারবার ফিরে এসে ডানাপালকের উজ্জলতা 
ক্ষয় ক’রে তারপর হয়ে গেছে ক্ষয়। 
মাছরাঙা মানুষের মতো সূর্য নয়? 
কাজ করে কথা ব’লে চিন্তা করে চলেছে মানব; 
যদিও সে শ্রেষ্ঠ চিন্তা সারাদিন চিন্তানাশা সাগরের জলে 
ডুবে গিয়ে নিঃশব্দতা ছাড়া আর অন্য কিছু বলে?

কাজলা দিদি


বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই,
মাগো আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?
পুকুর ধারে লেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই-
মাগো আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?
সেদিন হতে কেন মা আর দিদিরে না ডাকো;-
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আসি যখন, দিদি বলে ডাকি তখন,
ওঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো?
আমি ডাকি তুমি কেন চুপটি করে থাকো?
বল মা দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল-বিয়ে হবে!
দিদির মত ফাঁকি দিয়ে, আমিও যদি লুকাই গিয়ে
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে,
আমিও নাই-দিদিও নাই- কেমন মজা হবে।
ভুঁই চাপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল,
মাড়াস্ নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল।
ডালিম গাছের ফাঁকে ফাঁকে বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে,
উড়িয়ে তুমি দিও না মা, ছিঁড়তে গিয়ে ফল,-
দিদি এসে শুনবে যখন, বলবি কি মা বল!
বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই-
এমন সময় মাগো আমার কাজলা দিদি কই?
লেবুর ধারে পুকুর পাড়ে ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোপে ঝাড়ে’
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, তাইতে জেগে রই
রাত্রি হলো মাগো আমার কাজলা দিদি কই?