Sunday, April 9, 2017

ফুল পাপড়ি -৩  
- মনোজিত তালুকদার 

ফুলের অনুপস্থিতিতে 
বাগানে তীব্র দাহনের উদয় হতে লাগল,
একটা দিন একটা যুগের ন্যায়
অার একেকটা রাত তো কাটতেই চাইত না।
অাগের বারের প্রথম রাতে
অামি তাকে বিয়ে করেছিলাম
অন্ধকারকে স্বাক্ষী রেখে।
সেও অামায় তার প্রজাপতি মেনে
মাথা রেখেছিল তপ্ত বাহুতে,
তবু কেন সে অামায় অপমান করল?
চোখের ভাষা নাহয় বুঝল না, তাই বলে
পরাগের ভাষাও ছেরে যাবে?
অাজকাল তাই এসব কিছু খুবই
পীড়া দিতে লাগলো।
পাপড়ি ঢাকা ফুলের মধুতে যে একবার
স্নানোৎসবে মেতেছে,
সে কি করে ভুলে সেই মধুক্ষন?
এবার অামিই
অামি ছুটে গেছি অাবার তার স্পর্শ পানে,
ছুটে গেছি অনন্ত প্রাণের সম্মোহনে।
যেখানে শরতের বাতাস ছুঁয়ে যায়
বুকের গভীর অবধি।
অাবেদন ফেলতে পারেনি ফুল
স্বীকার করেছে চিরচেনা সুর।
ভেসে গেছে অামার পালহীন নৌকায়
যার মাঝি একটা ভাগ্যহত মুসাফির।
সুখের দিনগুলো কেটে গেল বিদ্যুৎবেগে,
একটা বছর কাটিয়ে দিলাম ফুলের সাথে
স্বপ্ন দেখতে দেখতে।
অাচমকা যখন ফুলের অাপন স্থানে
চলে যাওয়ার সময় হলো,
ফিরে এলাম বাস্তবতায়, যেখানে অামার
বিবেক বধির, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ।
তবু এবার অামি ফুলের পক্ষ নিলাম
উৎসাহ দিলাম ভাল থাকার।
অামি ফুলের উপর রাগ করিনি,
যদিও অবাক হয়েছি মিছি মিছি, তবুও
অামি ফুলের সাথেই অাছি।
সে চলে যাক, তবু
ভাল থাক।
ফুল পাপড়ি -২
- মনোজিত তালুকদার 

ফুল অাশাহত করেনি,
ফিরে এসেছিল দিগন্তের টানে।
তাও অবার নেশাখোর চোখ দুটো
যে সন্ধায় ছাদের পানে ধায়
সেই সন্ধায়।
হায়েনা যেভাবে শিকার লক্ষে ছুটে,
সমস্ত উন্মাদনার অাত্মচিৎকার যেমন
পরে থাকত কেবল,
সেই সন্ধায়।
অামি অানন্দিত হয়েছিলাম বেশ,
অার দিয়েছিলাম
শতবর্ষী হওয়ার অাশির্বাদ।
ফুলের পাপড়ি যে অামার কোলে
এসে পরবে, ভাবিনি, কেবল
অানন্দিতই হয়েছি বহুরূপে।
অামায় দেখাল দাবানলের তীর্ব দাহন,
চেনাল কেমন করে ডাঙ্গায় একটা মাছ
তরপাতে তরপাতে মারা যায়।
অামার মাথার ঘুরপাকে সমগ্র দেহ সেদিন
অামার হাতে ধরা দিল, এক অন্য অামি হয়ে।
নিজেকে অাবিষ্কার করলাম রয়্যাল প্লেসে,
এক অন্য অামার মত।
গ্রহন করেছি তাকে এক অন্য অামার করে।
এবারও ফুল অামায় ছেড়ে কথা বলেনি,
ছেড়ে গেছে সে তার মত করে
সবকিছু অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়ে।
এবার খানিকটা অাজবই হলাম,
নিজের সকল সত্ত্বা তাকে দিয়ে
একলা নিঃস্ব বসে ভাবি
মানলাম, সেবার নাহয় ফুল অামার চোখের ভাষা বুঝেনি,
কিন্তু এবার কি পরাগের ভাষাও
ছেরে যাবে?
গেল, পঁচিশ বছরের মরা নদীতে
বানের ডাক দিয়ে সে
চলে গেল..
ফুল পাপড়ি  
- মনোজিত তালুকদার 

প্রথম যেবার বাগানে ফুল এলো!
চিনতে পারিনি সুভাষ।
সেটা কি প্রখর রোদের কৃষ্ণচূড়া ছিল
নাকি বাদলা কদম ফুল,
হালকা ঝড়েই ঝরে গেল
দেখায়নি তার অাকাশ।
শৈশবেরই গন্ধমাখা শান্ত শিষ্ট কিশোর,
চায়নি পেছন ফিরে খুঁজে নি সেই সুর।
অবাক স্বপ্ন বুকে নরম অাশা
মাঝখনে রংধনু করে তামাশা।
সময় কাটিয়ে তারপর বাগানে
নতুন ফুল এলো,
প্রজাপতিরাও গুন গুন সুরে
চিনিয়ে দিল প্রকৃতির স্বপ্নের মাধূরীকে।
সেদিন অাশ্বিনের সন্ধায় অামি ফুলের চোখে
চৈত্রের দূপুর দেখেছিলাম।
দেখেছিলাম একটা অাস্ত বিপরীত সমাজ
গিলে খাওয়ার কামনা।
পেয়েছিলাম দূর্ভীক্ষের দিনে তার বাহুতে
মরে পরে থাকার ভরসা।
তবু সে কোন এক সন্ধাতেই মিলিয়ে গেল
অাবছা কুয়াশায়।
অনেক খুঁজেও হিসাব মিলাতে পারিনি
অবাকও হয়েছি মিছি মিছি।
তবু অাশা ছাড়িনি, স্বপ্নও হারাইনি...

Saturday, May 9, 2015

মা,

এখন মাঝরাত,
আমি জানি তুমি আমাদের মত ঘুমাও নি। 
একটা সময় ছিলো, তুমি রাতে বিশ্রাম নিতে; 
এখন আর সেই ফুরসত কই? 
তোমার বুকে যে ২৪ ঘন্টাই ঘোরে অর্খনীতির চাকা! 
তাই এই অসময়েই তোমাকে স্মরণ করছি।
মা,
৯ মাসের অবিচল ধৈর্য্য ও উত্তাল বেদনার পরই তো তুমি ‘মা’। 
শৈশবে যে শিশু উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতো, 
যৌবনে প্রাচুর্যের মোহে সে লাগামহীন টাট্টু ঘোড়া; 
বেয়াড়াপনা তার রন্ধ্রে-রন্ধ্রে। 
দু’দশক আগেও, এটাকে বোধ হয় দুষ্টুমি বলা যেতো, 
কিন্তু এখন, কিন্তু এখন নষ্টামি বলা ছাড়া কোনো গতি দেখছি না।


তোমার প্রসব বেদনার ক’বছর আগে 
যে ধ্বনি বা বর্ণমালার জন্য জীবন হারিয়ে শহীদ পেলাম; 
সেই সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের রক্তে ভেজা শার্ট যাদুঘরে না থেকে, 
ঐ শার্টের একটি সুতাও যদি আমার হৃদয়ে থাকতো, 
তাহলে, 
তাহলে বুলিতে যে মিথ্যা, আর ঝুলিতে যে পাপ, তার শাপ কিছুটা হলেও মোচন হতো।

রাজপথে সব প্রজারাই ছিলো, ভাষার দাবীতে প্রানের আকুতি
শক্ত পিচে ফুল ফুটেছিলো, স্বরে_অ,  স্বরে_আ , হ্রস্ব_ই
এখন ভাষার বাসা শুধু বুকে, মুখ খুঁজে ফিরে ধুঁকে-ধুঁকে,
মুখে ফোটে ফিরিঙ্গি খই, ক- খ- গ পলাতক রই॥

সুখ বা শোক দিবস দুটোই এখন বানিজ্যিক হায়েনার খাদ্য, 
আর ১৬ই ডিসেম্বর বা একুশে ফেব্রুয়ারি; 
সবই ফুরফুরে “হলিডে”। 
কনসার্ট, কনফারেন্স, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, এমনকি, 
এমনকি সংসদ অধিবেশন; 
সব এখন “স্পনসর্ড”! 
সার্বজনীন পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে লাখ টাকার আতশবাজি ফুটে; 
আর সেই একই অনুষ্ঠানে গলায় প্ল্যাকার্ড লাগিয়ে ভিক্ষা করে একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা।
যে মানচিত্রের সীমানা লাখো শহীদের রক্তের কালিতে আঁকা, 
সে সীমানায় আজো রক্ত ঝড়ে। 
যে সার্বভৌমত্বের বড়াই করে বলি “আমরা বাংলাদেশী”; 
সেই সার্বভৌমত্ব কেনা-বেচা হয় আন্তর্জাতিক মীমাংসার টেবিলে। 
“কূট”এর সংগে “নীতি”যায়না বলেই বোধ হয়, 
কূটনীতি না বলে সবাই “ডিপ্লোমেসি” বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। 
আর প্রতিনিয়ত নিজের সাথে প্রতারনা করা জনগন বোঝেনা যে 
পাঁচ বছর পর-পর তারা একই ভুল করে। 
থোড়-বড়ি-খাড়া আর খাড়া-বড়ি-থোড়; 
বার বার খাল কেটে কুমির আনা কবে, কবে শেষ হবে তোর?

প্রচারনাতেই প্রসার, “আর্ট”এ শুধু টাকার কালচার,
স্বাধীনতা হলো পন্য, বিলবোর্ড-প্ল্যাকার্ডে রঙের বাহার।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দেশটা এখন পাশার বোর্ডে
ষোলো কোটি জনতা, পিঠ বাঁচিয়ে নিজেরাই বাঁচে॥

মা,
জানি তুমি মমতাময়ী, 
একটাও আগ্নেয়গিরি নেই তোমার বুকে, 
আছে কেবল জালের মত বিছিয়ে রাখা নদী। 
তোমার শোকের বহি:প্রকাশ হিসেবে সেখানে প্রায়ই চর পড়ে। 
তোমার ক্ষোভ দেখি টর্নেডোতে, ভুমিকম্পে, জলোচ্ছাসে… 
তোমার কি একবারও মনে হয় না মা, 
এ অস্তিত্বের কোন মানে নেই, এই ঘর ঠিকানাবিহীন? 
তোমার কি মনে হয় না, 
আঁতুড় ঘরে লবন দিয়ে শেষ করে দেয়া উচিৎ ছিলো তোমার পথভ্রষ্ট সন্তানকে, 
মনে হয় না “সাফারি পার্ক” থেকে জঙ্গল ভালো?
আমার তো মনে হয়, ছোট খাঁচা থেকে মুক্ত হয়ে আরো বড় খাঁচায় এলাম! 
জেলখানাতেই আছি এখনো… 
এখান থেকেই চিঠিটা পোস্ট করবো। 
পেলে,পেলে উত্তর দিও…

এখানে আমৃত্যু অন্ধকার, অপেক্ষায় শুধু পারাপার
রোদের ফালি, চাদেঁর কালি, নীলাকাশের হাহাকার।
হাড়ের তুলিতে রক্তের রঙে, যে প্রলাপ এ চিঠিতে
সেই কান শুনে নেবে, জ্বলে যে আমার দহনে॥
পৌছেঁ যাবে ঠিকই জেনো, তোমার আমার পোস্টবক্সে
পৌছেঁ যাবে ঠিকই জেনো, দেশ-মাতার ঠিকানাতে
পৌছেঁ যাবে ঠিকই জেনো, তোমার আমার পোস্টবক্সে
পৌছেঁ যাবে ঠিকই জেনো, দেশ-মাতার ঠিকানাতে...


Title: Desh Matar Kache Chithi
Band: Shohortoli
Album: Opor Prishtha Droshtobbo

Tuesday, April 14, 2015

জন্মান্তরেও তুমি
                
                        শুভাশীষ তালুকদার (শিমুল )

কত না জনম পার করেছি
তোমায় পাব বলে,
শত জনমের সাধনার পরে
তুমি আমার হলে !

জন্ম থেকে জন্মান্তরে
তোমায় খুঁজে যাওয়া,
শত জনম পার হয়ে
তোমায় খুঁজে পাওয়া !

বিধাতার কাছে চেয়েছি তোমায়
কত,না নয়ন জলে,
নিও না গো তারে তুমি
যারে তুমি দিলে !

জনম আমার পূর্ণ হল
তোমায় কাছে পেয়ে,
স্বর্গ সুখের সুধার মাঝে
মন যে ওঠে গেয়ে !

প্রাণের সাথে প্রাণ মিলিয়ে
প্রেমের গান গাওয়া
হৃদয় মাঝে সুখ এনে দেয়,
তোমার একটু ছোঁয়া !

সারাটা জীবন থেক তুমি
আমায় ভালবেসে,
জনম আমার ধন্য কর
থেকে আমার পাশে !